নাদিম আহমেদ অনিক: নার্সিং ইনষ্টিটিউট, নওগাঁ এর বোর্ড পরিক্ষায় নকল করে প্রশ্নোত্তর খাতায় লিখতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের ইশরাত জাহান তন্বী নামের ৩য় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে ধরার পরে বিষয়টি নিয়ে নানান সমালোচনার সূত্রপাত হয়।
ঐ শিক্ষার্থীর বসার চেয়ারে আগে থেকেই লিখে রাখা পরিক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে বেশ কয়েকটি প্রশ্নোত্তর সঠিকভাবে মিলে যাওয়াই প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানান সমালোচনার সৃষ্ঠি হয়।
নকল করা অবস্থায় হাতেনাতে ধরার পরে সেই শিক্ষার্থীর খাতা মাত্র ৩০ মিনিট আটকে রাখা ও তার সেই বসার চেয়ারটি পরিবর্তন এর পাশাপাশি পরিক্ষা শেষে সেই শিক্ষার্থীর থেকে পরবর্তীতে আর এমন হবেনা মর্মে লিখিত নেন ইনষ্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানাযায়, নার্সিং ইনষ্টিটিউট নওগাঁয় বার্ষিক/ বোর্ড পরিক্ষা চলমান অবস্থায় গত ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত লিডারশীপ এন্ড ম্যানেজমেন্ট পরিক্ষা কেন্দ্র ৫ নং রুমে পরিক্ষায় দায়িত্বরত গার্ড নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর শামীমা আক্তার পরিক্ষার্থী ইশরাত জাহান তন্বীর আডমিট কার্ড যাচাই ও খাতা স্বাক্ষরের জন্য চাইলে তা দিতে বিলম্ব করায় সন্দেহের সূচনা হয়। পরবর্তীতে নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর শামীমা আক্তার লক্ষ করে পুরোটা চেয়ার জুড়ে সেদিনের পরিক্ষার প্রশ্নোত্তর লেখা যা প্রশ্নপত্রের সাথে সরাসরি মিল এবং এর পাশাপাশি যে চেয়ারে বসে শিক্ষার্থী তন্বী পরিক্ষা দিচ্ছে সে চেয়ারে অন্যান্য চেয়ারের মতো পরিক্ষার্থীর রোল নাম্বারের ট্যাগ নেই। বিষয়টি নিয়ে নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর শামীমা আক্তার তৎক্ষণাৎ শিক্ষার্থীর বসার সে চেয়ারটি পরিবর্তন করে দেন।
পরবর্তীতে পরিক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত ঢাকা থেকে আসা পরিদর্শক রাফিজা খাতুন কে বিষয়টি অবগত করলে পরিক্ষার্থী তন্বীর খাতা আধাঘন্টা আটকে রাখার পরামর্শ দেন। এবং পরিক্ষা শেষে 'ভবিষৎ সময়ে এমন কাজে আর লিপ্ত হবেনা' এই মর্মে শিক্ষার্থী তন্বীর থেকে একটি কাগজে লিখিত নেন ইনষ্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে নানান প্রশ্নের জটলা সৃষ্টি হয় সচেতন মহলে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে অনুষ্ঠিত পরিক্ষার কেন্দ্র সচিব নাজমা আক্তার ও প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ মোঃ আমজাদ হোসেন
আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে প্রতিদিনের প্রশ্নপত্র নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে পরিক্ষার দিন নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসেন। তবে প্রশ্নোপত্র ফাঁসের অভিযোগটি তারা বানোয়াট বলে দাবী করেন।
এ বিষয়ে নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর শামীমা আক্তার বলেন, ১৫ তারিখে পরিক্ষার্থী তন্বীর আডমিট ও তার খাতা চাইলে সে তা দিতে বিলম্ব করলে তাতে আমার বেশ সন্দেহ হয়। পরে তার চেয়ারে চোখ পরলে দেখি পুরোটাই লেখা। পরে প্রশ্নপত্রের সাথে উত্তর মিলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সে চেয়ারটি সরিয়ে অন্য চেয়ার সেখানে বসিয়ে দেই। আর একটা বিষয় লক্ষ করি সে রুমে সবগুলো চেয়ারে পরিক্ষার্থীর রেল নাম্বারের ট্যাগ থাকলেও তন্বীর চেয়ারে ছিলোনা। বিষয়টি পরে ঢাকা থেকে আগত পরিদর্শক ম্যাডাম রাফিজা খাতুন ও চলমান পরিক্ষা কেন্দ্র সচিব ও ইনস্ট্রাকটর ইনচার্জ কে বিষয়টি অবগত করলে পরিদর্শক ম্যাডামের পরামর্শ অনুযায়ী তন্বীর খাতা ৩০ মিনিট আটকে রাখি এবং পরবর্তীতে সে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এবং পরিক্ষা শেষে কর্তৃপক্ষ থেকে আমাকে অবগত করা হয় যে শিক্ষার্থী তন্বীর থেকে একটি লিখিত নেওয়া হয়েছে যে এমনটি আর পরবর্তীতে সে করবেনা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চলাকালীন নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির সাবেক নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ সংবাদকর্মীকে ফোনে জানান, প্রশ্নোত্র ফাঁস অনেক আগে থেকেই নার্সিং ইনস্টিটিউট নওগাঁয় হয়ে আসছে এবং এর সাথে জরিত কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও নানান তথ্যের বিবৃতি উপস্থাপন করেন সংবাদকর্মীর কাছে।
পরবর্তীতে নওগাঁয় স্থানীয় এক বেসরকারী নার্সিং ইনস্টিটিউট এর স্বত্ত্বাধিকারী মুঠোফোনে প্রতিবেদককে নার্সিং ইনষ্টিটিউট, নওগাঁ এর নকলকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে নিষেধ এর পাশাপাশি তার সাথে একান্ত দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
এ বিষয়ে পরিক্ষা পরিদর্শক রাফিজা খাতুন বলেন, নকলের বিষয়টি জানতে পেরে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছি। নকল অবস্থায় পরিক্ষার্থীকে ধরার পরেও তাকে এক্সফেল কেন করা হলোনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কয়েকটি পদক্ষেপের মাঝে একটি অবলম্বন করতে পারি তা অনুযায়ী পরিক্ষার্থীর খাতা আধাঘন্টার জন্য আটকে রাখা হয়েছিলো।
নার্সিং ইনষ্টিটিউট নওগাঁ এর নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ মোঃ আমজাদ হোসেন তন্বীর নকল করার ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আসতেই পারেনা। কারণ অতি গুরুত্ব ও সতর্কতার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র আমরা বহন করে থাকি। যদি কোন শিক্ষার্থী নকল করে থাকে তা একান্ত তার বিষয়।
চেয়ারে লেখা প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থী নকল যদি তার চেয়ারে লিখে থাকে তার সাথে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয় জড়িত হতে পারেনা। কারণ আমরা খেয়াল করেছি এবারের পরিক্ষায় আসা প্রশ্নগুলোর সাথে বিগত ২০২২-২০২৩ সালের প্রশ্নপত্রের বেশ মিল রয়েছে।